ঢাকা ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

উত্তরায় বুলেট কেড়ে নিল নাইমার স্বপ্ন,রক্তমাখা পোশাকই এখন স্বজনদের স্বম্বল

মতলব,চাদপুর প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ১২:৪৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৮৩৪ বার পড়া হয়েছে

পরিবার নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় থাকতাম। সেখানকার একটি ভবনের চারতলার বারান্দায় শুকনো কাপড় আনতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয় আমার মেয়ে নাইমা আক্তার সুলতানা। বাড়িতে সে একদিন আমাকে বলেছিল, বাবা তোমার মতো ডাক্তার হয়ে আমিও মানুষের সেবা করব। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত নাইমার বাবা গোলাম মোস্তফা দেওয়ান।

তিনি জানান, সেদিন উত্তরায় ৫নং সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। উত্তরায় সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবার নিয়ে বাস করি। সেখানকার মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল নাইমা।

রক্তমাখা পোষাক হাতে নাঈমার স্বজনরা

কে জানত বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগবে তার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে তার মা ও পরিবারের লোকজন  হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। ২০ জুলাই নাইমার লাশ তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমুয়াকান্দির দেওয়ান বাড়িতে দাফন করা হয়।

নাইমার বাবা একজন হোমিও চিকিৎসক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল মেজো। তার বড় বোন তাসফিয়া সুলতানা ঢাকা মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই আব্দুর রহমান উত্তরার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নাইমার রক্তভেজা পোশাক ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন আর আহাজারি করছেন পরিবারের সদস্যরা। আর এ দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কী অপরাধে কারা নাইমাকে গুলি করল এর বিচার চান বাবা-মা।

বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, গত শুক্রবার বিকাল ৫টায় তার বাসার পাশে গোলাগুলি চলছিল। নাইমা ওই সময় সেটি দেখার জন্য ঘরের বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারে। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে স্বজনরা তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ২০ জুলাই পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

উত্তরায় বুলেট কেড়ে নিল নাইমার স্বপ্ন,রক্তমাখা পোশাকই এখন স্বজনদের স্বম্বল

আপডেট সময় : ১২:৪৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ অগাস্ট ২০২৪

পরিবার নিয়ে রাজধানীর উত্তরায় থাকতাম। সেখানকার একটি ভবনের চারতলার বারান্দায় শুকনো কাপড় আনতে গিয়ে গুলিতে নিহত হয় আমার মেয়ে নাইমা আক্তার সুলতানা। বাড়িতে সে একদিন আমাকে বলেছিল, বাবা তোমার মতো ডাক্তার হয়ে আমিও মানুষের সেবা করব। কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন ১৯ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গুলিতে নিহত নাইমার বাবা গোলাম মোস্তফা দেওয়ান।

তিনি জানান, সেদিন উত্তরায় ৫নং সড়কে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। উত্তরায় সড়কের পাশেই একটি ভবনের চারতলায় পরিবার নিয়ে বাস করি। সেখানকার মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল নাইমা।

রক্তমাখা পোষাক হাতে নাঈমার স্বজনরা

কে জানত বারান্দায় শুকানো কাপড় আনতে গিয়ে মাথায় গুলি লাগবে তার। সেখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। পরে তার মা ও পরিবারের লোকজন  হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে জানান। ২০ জুলাই নাইমার লাশ তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আমুয়াকান্দির দেওয়ান বাড়িতে দাফন করা হয়।

নাইমার বাবা একজন হোমিও চিকিৎসক। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সে ছিল মেজো। তার বড় বোন তাসফিয়া সুলতানা ঢাকা মাইলস্টোন কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই আব্দুর রহমান উত্তরার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

নাইমার রক্তভেজা পোশাক ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন আর আহাজারি করছেন পরিবারের সদস্যরা। আর এ দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। কী অপরাধে কারা নাইমাকে গুলি করল এর বিচার চান বাবা-মা।

বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, গত শুক্রবার বিকাল ৫টায় তার বাসার পাশে গোলাগুলি চলছিল। নাইমা ওই সময় সেটি দেখার জন্য ঘরের বারান্দায় গিয়ে উঁকি মারে। হঠাৎ একটি গুলি এসে তার মাথায় লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে। সেখান থেকে স্বজনরা তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত ২০ জুলাই পারিবারিক কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।