December 6, 2024, 10:35 pm

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাজার কোটি টাকার মনু প্রকল্পের কাজ বন্ধ, বাতিল হতে যাচ্ছে মেগা প্রকল্প

শেখ মাহমুদুর রহমানঃ
  • Update Time : বুধবার, এপ্রিল ১৭, ২০২৪

মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমস্যা বর্ষা মৌসুমে বন্যা, দীর্ঘ ১৪৫ কিঃমিঃ মনু নদী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢল নেমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর বাঁধ ভেঙ্গে অথবা বাঁধের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে জেলা শহরসহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসল ফসলাদিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

প্রায় ১৪৫ কিঃমিঃ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ দীর্ঘ দিন পুনর্নির্মাণ না-করা এবং নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার কারনে, বর্ষাকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলা শহর-সহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যা প্রতিরক্ষা ও নদী ভাঙ্গন রোধে, মনু নদীর দুই পাড়ে প্রায় ৮৬ কিঃমিঃ বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের পুর্নসংস্কার কাজের জন্য বর্তমান সরকার ২০২০ সালে হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ‘একনেক’ সভায় অনুমোদ পায়।

২০২০ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি পুর্নাঙ্গ অনুমোদন পেয়ে, প্রায় ৯ শত ৯৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা চুক্তি মূল্যে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস হইতে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এপর্যন্ত ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কাজ হয়েছে বাকি ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে বলে ধারনা করা যাচ্ছে।

মনু নদীর দুই পাড়ে প্রায় ৮৬ কিঃমিঃ বন্যা প্রতিরক্ষা বাধের স্থায়ী ভাবে বন্যা প্রতিরক্ষা বাধ নির্মাণে প্রায় ৭২ ভাগে বিভক্ত (৭২টি প্যাকেজ) করে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়।

কাজ গুলোর মধ্যে রয়েছে স্থায়ীভাবে নদীর পাড় অর্থাৎ নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ ৬৭টি স্থানে প্রায় ৩০.২৪০ কিঃমিঃ, ৩৪ টি স্থানে চর অপসারণ প্রায় ১২.১১০ কিঃমিঃ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ পুর্নবাসন নদীর দুই পারে প্রায় ৮৫.৯১০ কিঃমিঃ, নতুন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ প্রায় ২.৫০০ কিঃমিঃ, পুরাতন ফ্লাড ওয়াল নির্মাণ প্রায় ০০.৭৬৬ কিঃমিঃ ভূমি অধিগ্রহণ প্রায় ২২৮.৫৬ একর।

মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় সামনে চলে আসে বিভিন্ন সমস্যা, যাহার কোন সমাধান না হওয়ায় প্রকল্পটি কাজ প্রায় বন্ধ রয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখাযায় শতভাগ কাজের মধ্যে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ ভাগ কাজের অগ্রগতি হয়েছে, বাকী কাজ গুলো ভিন্ন ভিন্ন কারনে বন্ধ রয়েছে। বাকী কাজ সমাপ্ত করাতে হলে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রধান দুটি সমস্যার সমাধান না হলে প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধান দুটি সমস্যার কারণ হল ভূমি অধিগ্রহণ না করা এবং প্রকল্পে নামে বরাদ্দকৃত অর্থ অর্থাৎ টাকা ছাড় না-পাওয়া। ভূমি অধিগ্রহণ না করার কারণে জায়গার মালিকেরা তাদের জায়গা বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে দিচ্ছেনা, এমনই লোকজন রয়েছেন যাদের শুধুমাত্র একটুকরো জমি বা ভিটা বাড়ি ছাড়া অন্য কোন জায়গায় নাই, সেই জায়গাটুকু বন্যা প্রতিরোধ বাধের নীচে পরে যাচ্ছে, এতে অনেক পরিবার ভিটা বাড়ি বিহীন ও ভূমিহীন হয়ে যাচ্ছে। এসব কারণে প্রকল্পের কাজ বাধার সম্মুখীন হওয়াতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান গুলো প্রকল্পের কাজ করতে পারছে না।

সরকারের পক্ষ থেকে জায়গার উচিত মূল্য না দিয়ে কাজ না-করার জন্য কয়েকজন জায়গার মালিক আদালতে মামলা দায়ের করেন, আদালত মামলা শেষ না-হওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

অন্যদিকে চলমান কাজের অনুকূলে ঠিকাদাররা তাদের প্রাপ্য অর্থ উত্তোলন করতে চাইলে, মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের কাজের অনুকূলে পাপ্য টাকার পুরোটা দিত পারছে না। অর্ধেকের মত প্রাপ্য টাকা বাকী থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ বন্ধ করে রেখেছে।

পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় হতে পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের তত্বাবধায়ক প্রকৌশল ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যান দেরকে নিয়ে স্থানীয় ভাবে সমস্যা গুলো সমাধান করার জন্য। অন্যতায় হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রকল্পের বিভিন্ন জাগার কাজ পরিদর্শন করে দেখা যায়, বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তৈরী করা প্রায় ১০ লক্ষাধিক সিসি ব্লক দীর্ঘদিন ধরে পরে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ না-করার কারণে নদীর তীরে প্রসেসিং বা স্থাপন করতে পারছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তৈরিকৃত সিসি ব্লক প্রসেসিং বা স্থাপন করার জায়গা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডেকে বারবার পত্র দিয়ে তাগিদ দিচ্ছে। ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ না-হওয়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলোকে তৈরিকৃত সিসি ব্লক প্রসেসিং বা স্থাপন করার জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারছেনা।

পুরাতন বাধে উপর দিয়ে নতুন করে উচ্চতা ও প্রসস্থতা বৃদ্ধি করে, বন্যা প্রতিরক্ষা বাধ তৈরির কাজে বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুৎ এর বৈদ্যুতিক কুঠি ও লইন থাকার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। পল্লী বিদ্যুৎ এর বৈদ্যুতিক কুঠি ও ঝুলন্ত লইন অপসারন না করে কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গায় যানবাহন চলাচলের রাস্তা থাকায় সেখানে কাজ কারা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চুক্তি পত্রে এক কিঃমিঃ এলাকার মধ্য থেকে মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গুলো মাটি সংগ্রহ করতে না-পারায় অনেক জায়গায় মাটির কাজ বন্ধ রয়েছে। উল্লেখিত কারণ সমূহ-সহ বিভিন্ন সমস্যার কারনে বন্যা প্রতিরক্ষা বাধের কাজ বন্ধ রয়েছে।

পানি উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের কাজের সাথে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। যেমন প্রকল্প এলাকায় ভূমি অধিগ্রহণ করতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, বৈদ্যুতিক কুঠি বা তাঁর অপসারণ করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, গাছগাছালী করতন বা অপসারণ করতে বন ও পরিবেশ, মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তা অপসারণ বা বিকল্প রাস্তা তৈরির জন্য যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রকল্পের কাজে বিএসএফ এর বাঁধা সাড়াতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রয়োজন, স্থানীয় পর্যায়ে ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি অর্থাৎ সংসদ সদস্য সহ চেয়ারম্যান মেম্বারদের প্রভাব মুক্ত সহযোগিতার ভুমিকা রাখতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।

এ-ই মেগা প্রকল্পের সাথে এসব মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাদের দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে কাজের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি না হলে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর দুই পারের বাধের নিচুতলার অংশে অথবা নদীর ঝুকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে জেলা শহর সহ জেলার বিভিন্ন অঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, এবং বন্যা হলে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভবনাও রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অত্র এলাকার জনগণের জানমাল রক্ষার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সমূহ বিষয় নিয়ে প্রকল্পের আওতাধীন এলাকার সংসদ সদস্য বৃন্দ সহ প্রকল্পের আওতাধীন সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দকে নিয়ে জেলার মন্ত্রী মহোদয় প্রকল্পের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া অতীব জরুরী বলে সাধারণ মানুষ মনে করছে। প্রকল্প এলাকার সংসদ সদস্য বৃন্দ ও জেলার মন্ত্রী মহোদয় এই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে কোজ খবর নিয়ে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন বলে প্রকল্প এলাকার মানুষ ধারনা রয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category