রাজশাহীর মোহনপুর থানা, ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাথমিকভাবে হতাহতের খবর না পাওয়া গেলে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল পুড়ে গেছে।
রবিবার (৪ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মোহনপুর উপজেলা সদরে এই ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো উপজেলাজুড়ে।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মোহনপুর উপজেলায় জড়ো হতে থাকে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে তারা মোহনপুর থানায় হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে সেখান থেকে সরে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানার মধ্যে ঢুকে ভাঙচুর চালায় ও আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা মোহনপুর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এসময় সেখানে থাকা মোটরসাইকেল রাস্তায় এনে পুড়িয়ে দেয়।
একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় তারা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা থানায় হামলা করার পর পাশেই উপজেলা ভূমি অফিসে হামলা চালায়। এ সময় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। এ ছাড়াও ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় থানার সামনের মার্কেটেও। বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার সকাল ৯টা থেকে শিক্ষার্থীরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের মোহনপুর উপজেলা সদরে অবস্থান নেয়। এ সময় সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বিকল্প পথ হিসেবে যানবাহনগুলো তানোর ও দুর্গাপুরের কানপাড়া হাট হয়ে চলাচল করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে মোহনপুর উপজেলা চত্বরের আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে ভাঙচুর চালায়। এ সময় কার্যালয়ে সামনে থাকা তিনটি মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে। সেখান থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোহনপুর থানায় হামলা চালায়। এ সময় তারা থানায় আগুন দেওয়া ছাড়াও থানা পুলিশে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) হরিদাম মন্ডলের গাড়ি ভাঙচুর চালায়।
এ বিষয়ে থানার ওসি হরিদাম মন্ডল বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে একটু বিপর্যস্ত আছি। ভাই একটু পরে কথা বলবো।’
বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তারা রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে মোহনপুর ফায়ার সার্ভিসের ডিউটিম্যান সজিবুল ইসলাম বলেন, ‘তারা বেলা সাড়ে ১২টার দিকে খবর পান মোহনপুর থানা ও ভূমি অফিসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসে পুলিশ না আশায় নিরাপত্তার কারণে তারাও বের হতে পারেনি।’ তবে তাদের ফায়ার সার্ভিসের আশপাশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আছেন বলে ধারণা করেন তিনি।
অন্যদিকে রাজশাহীতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে আন্দোলনকারীরা ও আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রবিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টা থেকে আন্দোলনকারীরা নগরীর ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন। তার দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে রেলগেট এলাকায় অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীরা স্লোগানে স্লোগানে চারপাশ মুখর করে তুলেছেন। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও নানা স্লোগান দিচ্ছেন। তবে আন্দোলনরত ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থানের দুই স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি নেই। আওয়ামী লীগের আরেকটি অংশ নগরীর জিরোপয়েন্টে সমাবেশ করছে। তবে সাহেববাজার এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে।
এর আগে রবিবার সকাল ১০টা থেকে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরুর প্রথম দিন আন্দোলনকারীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) সামনে অবস্থান নেন। সেখান থেকে তারা তালাইমারী মোড় হয়ে ভদ্রায় আসেন। আন্দোলনকারীদের তালাইমারী মোড় ও ভদ্রা এলাকার পুলিশের কয়েকটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলতে দেখা যায়। আগের দিন শনিবার (৩ এপ্রিল) আন্দোলনকারীরা একইভাবে রুয়েটের সামনে থেকে ভদ্রা হয়ে রেলগেট পর্যন্ত আসেন এবং বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালান। এ জন্য রবিবার আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রেলগেট এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। তাদের হাতে হাতে ধারালো অস্ত্র এবং লাঠিসোঁটা দেখা গেছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের হাতেও রয়েছে লাঠিসোঁটা, হকিস্টিক, পাইপ এবং রড।
আন্দোলনকারীরা রেলগেট এলাকায় এলে তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এ অবস্থায় উত্তেজনা বিরাজ করছে এলাকাটিতে। তবে এখন আন্দোলনকারীরা ভদ্রা থেকে রেলগেটের দিকে এগিয়ে আসছেন না।
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, আন্দোলনকারীরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকারি স্থাপনা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।
Leave a Reply