ঢাকা ০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
সংবাদ শিরোনাম :
Logo রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারীর বাবার দাফন সম্পন্ন Logo আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মধ্যরাতে উত্তাল সিলেট Logo রাষ্ট্রদূত মুসফিকুল ফজল আনসারীর পিতার মৃত্যুতে মিফতাহ সিদ্দিকীর শোক প্রকাশ Logo পল্টনে ভবনে আগুন: প্রায় ৪ ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে Logo আর্সেনাল ম্যাচের ১০ জনকে বেঞ্চে রেখে লিগে টানা হার পিএসজির Logo সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় ২ জন: প্রতিবেদন Logo খালেদা জিয়া ঢাকায় পৌঁছাবেন মঙ্গলবার Logo ফুলবাড়ীতে দুই একর জমির ধান নষ্ট করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। Logo শ্রীমঙ্গলে সাংবাদিকদের সাথে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোঃ মুজিবুর রহমান চৌধুরী এর মতবিনিময় সভা Logo অনিয়মের অভিযোগে তিন ইউনিয়নে বিএনপি সম্মেলন স্থগিত

সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি

নাজমুন নাহার,জুড়ী প্রতিনিধিঃ
  • আপডেট সময় : ১২:২২:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
  • / ১৮২৭ বার পড়া হয়েছে

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের মুখ দেখার আশায় কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিসহ বিভিন্ন উপজেলা গ্রামে ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। মাঠজুড়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে ভালো ফলনের অপেক্ষায় কৃষকরা।

হাকালুকি হাওরে একরের পর একর এখন সূর্যমুখী ফুলে ভরে ওঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন পরিবার নিয়ে মাঠে গিয়ে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি ফুলের সাথে ছবি ও ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল ও কালাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাজদিহি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, সুর্যমুখী চাষ করা খেতে এখন ফুলের সমারোহ। সহস্রাধিক সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। বড় বড় সবুজ পাতার আড়ালে সুর্যের মতো মুখ উচুঁ করে আছে এই সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে গোটা মাঠ। এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময়। সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়নজুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।

হাকালুকির পাড়ে বিপাশা দাশ, অজয় পাল এবং ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার খলিল মিয়া গত বছর কিছুটা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও এবার ৬৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। তারা জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ ও সার পেয়েছেন এবং বর্তমানে ক্ষেতে প্রায় ওই জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার খলিল মিয়া আশা করছেন,ফলন পাওয়ার পর তিনি এই ক্ষেত থেকে ২-৩ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

কালাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাজদিহি গ্রামের জালাল আহমেদও ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বীজ সংগ্রহের সময় এসেছে এবং গরু-ছাগল কিছুটা ক্ষতি করেছে, তবে আশা করছেন ভালো ফলন হবে। তিনি জানান, মাত্র ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হয়েছে এরপরও ১০-১২ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যায়। ফুলের গাছ শুকিয়ে গেলে তা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা এই চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।

সূর্যমুখী চাষিরা জানান, ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। চাষিদের মতে কম খরচে ও অতি অল্প সময়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফসল চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য চাষিরাও সুর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয় হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল কোলেস্টেরল মুক্ত এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যার কারণে বাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে। কৃষি অফিস তাদের কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসের প্লানিং ও প্রজেক্ট অফিসার রণজিৎ চন্দ জানান, হাকালুকি হাওরে এবার সুর্যমুখী ফুল চাষ অনেক বেশি হয়েছে। ফলে কৃষকরা লাভবান বিগত বছরের চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এই তেলের চাহিদাও বেশি।

জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল আলম খান এ প্রতিবেদক কে জানান, জুড়ী উপজেলায় এবারে সুর্যমুখী ফুল চাষ কম হয়েছে মাত্র ১৫ বিঘা। গত বছরে সুর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছিলো ২০০ বিঘা।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

সূর্যমুখী ফুল চাষে কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি

আপডেট সময় : ১২:২২:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, রাজনগর, কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের মুখ দেখার আশায় কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে বিভিন্ন উপজেলায়। দেশের সর্ববৃহৎ হাওর হাকালুকিসহ বিভিন্ন উপজেলা গ্রামে ঘুরে এই দৃশ্য দেখা গেছে। মাঠজুড়ে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে ভালো ফলনের অপেক্ষায় কৃষকরা।

হাকালুকি হাওরে একরের পর একর এখন সূর্যমুখী ফুলে ভরে ওঠেছে। প্রতিদিনই প্রকৃতিপ্রেমী লোকজন পরিবার নিয়ে মাঠে গিয়ে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি ফুলের সাথে ছবি ও ভিডিও করে সোস্যাল মিডিয়ায় ছাড়ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল ও কালাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাজদিহি গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, সুর্যমুখী চাষ করা খেতে এখন ফুলের সমারোহ। সহস্রাধিক সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। বড় বড় সবুজ পাতার আড়ালে সুর্যের মতো মুখ উচুঁ করে আছে এই সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে গোটা মাঠ। এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময়। সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়নজুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।

হাকালুকির পাড়ে বিপাশা দাশ, অজয় পাল এবং ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার খলিল মিয়া গত বছর কিছুটা ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও এবার ৬৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। তারা জানান, কৃষি অফিসের সহায়তায় বীজ ও সার পেয়েছেন এবং বর্তমানে ক্ষেতে প্রায় ওই জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার খলিল মিয়া আশা করছেন,ফলন পাওয়ার পর তিনি এই ক্ষেত থেকে ২-৩ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।

কালাপুর ইউনিয়নের পূর্ব মাজদিহি গ্রামের জালাল আহমেদও ২০ শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। তিনি বলেন, বীজ সংগ্রহের সময় এসেছে এবং গরু-ছাগল কিছুটা ক্ষতি করেছে, তবে আশা করছেন ভালো ফলন হবে। তিনি জানান, মাত্র ১৫০০-২০০০ টাকা খরচ হয়েছে এরপরও ১০-১২ মন বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন।
সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা যায়। ফুলের গাছ শুকিয়ে গেলে তা জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে কম খরচে অধিক লাভ পাওয়া যাচ্ছে, ফলে কৃষকরা এই চাষে আরও আগ্রহী হচ্ছেন।

সূর্যমুখী চাষিরা জানান, ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। চাষিদের মতে কম খরচে ও অতি অল্প সময়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফসল চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য চাষিরাও সুর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ দিনে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয় হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আলাউদ্দিন জানান, সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল কোলেস্টেরল মুক্ত এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, যার কারণে বাজারে তেলের চাহিদা বাড়ছে। কৃষি অফিস তাদের কৃষকদের আরও উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দিচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী চাষের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

কুলাউড়া উপজেলা কৃষি অফিসের প্লানিং ও প্রজেক্ট অফিসার রণজিৎ চন্দ জানান, হাকালুকি হাওরে এবার সুর্যমুখী ফুল চাষ অনেক বেশি হয়েছে। ফলে কৃষকরা লাভবান বিগত বছরের চেয়ে বেশি লাভবান হবেন। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এই তেলের চাহিদাও বেশি।

জুড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদুল আলম খান এ প্রতিবেদক কে জানান, জুড়ী উপজেলায় এবারে সুর্যমুখী ফুল চাষ কম হয়েছে মাত্র ১৫ বিঘা। গত বছরে সুর্যমুখী ফুল চাষ হয়েছিলো ২০০ বিঘা।