May 1, 2024, 10:20 pm

স্বধীনতা হরন ও অর্জনে রাজনৈতিক বনাম সামরিক নেতৃত্বের প্রভাব

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, এপ্রিল ৭, ২০২৪
  • 366 Time View

আ.ল.ম ফজলুর রহমান :

বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলনের ইতিহাস সুদীর্ঘ। এর ফলশ্রুতিতে ৪৭ শে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের জন্ম। ব্রিটিশ ভারতে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাচার , নীলকর সাহেবদের নিষ্ঠুরাতা এবং ১৮৯৩ সালের লর্ড কর্নওয়ালিসের চীরস্হায়ী বন্দোবস্তের ফলে যে নিষ্ঠুর শোষক চরম অত্যাচারি জমাদারী প্রথার উদ্ভব হয় বাংলায় তার বিরুদ্ধে প্রজা বিদ্রোহ হলেও তা স্বাধীনতা যুদ্ধের রুপ পরিগ্রহ করেনি। ১৮৫৮ সালে সিপাহী বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকারের শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিলেও অবশেষে তা অতীব নিষ্ঠুর ভাবে অবদমিত হয়। অনেকেই আমরা সিপাহী বিদ্রোহকে ব্রিটিশ ভারতে প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা বলে আখ্যায়িত করি। ১৭৫৭ খৃঃ নবাব সিরাজদ্দৌলালার পতনের পরে বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের যে অস্তাগমন হয় ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসনে সেই সূর্যের উদয়ন ঘটেনি। উল্লেখ্য নবাব সিরাজদ্দৌলার পতন হয়েছিল তাঁর সামরিক নেতৃত্বের ষঢ়যন্ত্রের ফলে।

নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের সময় যদিও ঐসময়ের রাজনৈতিক ও শাসন কাঠামো ক্ষয়িষ্ণু অবস্হায় নিপতিত ছিল তার পরেও তা বাংলার অর্থনৈতিক অবস্হাকে প্রভাবিত করতে পারেনি। অর্থাৎ বাংলার সম্পদ ও অর্থ ভান্ডার তখনও পরিপূর্ণ ছিল। এর অর্থ হচ্ছে বাংলার সাধারণ মানুষ রাজনীতি সচেতন ছিলনা। তাইতো ইংরেজরা যখন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে বন্দি করে হাতির পিঠে করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসছিল তখন সাধারন মানুষ হতবিহ্বল হয়ে এই দৃশ্য দেখছিল। তারা কল্পনাও করতে পারেনি নবাবের পতনের সাথে বাংলার স্বাধীনতাও অস্তমিত হয়ে গেছে।

প্রশ্ন হতে পারে বাংলায় নবাবী শাসনের সময় জনমানসে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ কেন হয়নি? হয়নি কারণ ঐ সময় রাজতন্ত্রের বাইরে অন্য কোন শাসন ব্যাবস্হার কোনো ধারণা জনমানসে ছিলনা। সাধারন মানুষ দেশ শাসন করবে এমন চিন্তা কারো মন নগজে ছিলনা। শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দেশ শাসনের ধারণা জনমনে জন্ম নিতে নবাব সিরাজদ্দৌলার পতনের পর একশত বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে ভারত ও বাংলার মানুষকে। এই একশত বছর ভারত ও বাংলা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনে ছিল। ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের বাইরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন শোষন ও নিষ্ঠুর অত্যাচার তদুপরি বেনিয়া ইংরেজ বিদেশী এবং সাদা চামড়ার বিধর্মী মানুষ। এই সব চিন্তা সাধারন মানুষের মাঝে নানা প্রশ্নের জন্ম দিতে থাকে। মানুষ ভাবতে থাকে সাত সমুদ্র তের নদীর পারের বিধর্মী সাদা চামড়ার মানুষ আমাদের দেশের সম্পদ লুটকের নিয়ে যাচ্ছে কেন? কেন তারা ভারত এবং বাংলা শাসন করবে? শুরু হয় দেশ নিয়ে সাধারণ মানুষের স্বদেশ চিন্তা। রচিত হতে থাকে নাটক নভেল কবিতা এবং স্বদেশী গান। সাধারণ মানুষের মাঝে জন্ম নেয় রাজনৈতীক চিন্তা। ভারত ও বাংলার মানুষের মনে জন্ম নেয়া কোম্পনি বিরোধী ক্ষোভের আগ্নেয়গিরীর জ্বালা মুখ খুলে দেয় ১৮৫৭ সালের বাংলা ও ভারত ব্যাপী সিপাহী বিদ্রোহ। কিন্তু এই সিপাহী বিদ্রোহ বাংলা ও ভারতের ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পারলেও ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটায়। শুরু হয় রাণী ভিক্টোরিয়ার সরকারী শাসন।

The British East India Company (1600-1874) was the largest and most successful private enterprise ever created. All-powerful wherever it colonised, the EIC’s use of its own private army and increasing territorial control, particularly in India, meant that it faced ever-greater scrutiny from the British government in the late 18th century. Restricted by several successive acts of Parliament over many decades because of allegations of corruption and unaccountability, the EIC’s independence ended with the chaos of the Sepoy Mutiny of 1857-8. The British Crown replaced the EIC’s board of directors as the rulers of British India, and Parliament officially dissolved the EIC in 1874.

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখাপেক্ষি হয়ে ভারতের শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের দিকনির্দেশনা কামনা করলেও ক্ষয়িষ্ণু মুঘল শাসন এবং বৃদ্ধ বাদশাহ’র পক্ষে তেমন কিছু করার ছিলনা। অবশেষে তিনি বন্দি হয়ে বার্মাতে নিত হন এবং সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সিপাহী বিদ্রোহের অভিঘাত ভারত এবং বাংলার প্রতিটি কোনায় ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মন মগজে নতুন করে স্বদেশ চিন্তার উন্মেষ ঘটায়। জন্ম নেয় জনমানুষের রাজনৈতীক নেতৃত্ব। শুরু হলো ভারত ও বাংলার নতুন অধ্যায়, গনজাগরন ও গনমানুষের রাজনীতি যার মর্মমূলের প্রনোদনা, প্রেরনা ও প্রানশক্তি ছিল সিপাহী বিদ্রোহ।

আমরা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে এখানেও আমরা সিপাহী বিদ্রোহের পুনরাবৃতি দেখতে পাই। স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভে বাংলাদেশেও সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান ও মূল নেতার অনুপস্হিতিতে সামরিক নেতৃত্বে রাজনৈতিক নেতৃত্ব সংগঠিত হয়। গঠিত হয় বাংলাদেশ প্রবাসি সরকার। অবশেষে ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। অতএব বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে এবং এর সংরক্ষণে সামরিক নেতৃত্বের প্রবল প্রভাব রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে অনাগত কালে বাংলাদেশের মানুষের মন মগজে প্রভাব বিস্তার করে থাকবে এটাই বাস্বতা।

 

লেখক ও কলামিস্ট
আ.ল.ম ফজলুর রহমান
সাবেক বিডিয়ার প্রধান

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category