কুমিল্লায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের গণমিছিলে, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছুড়েছে তারা। এতে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হয়েছেন।
শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে কুমিল্লা নগরীর রেসকোর্স এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন আরফান মজুমদার (১৬), মো. সৌরভ (২৫), মারুফ (১৬), আসিফ (১১), মৃদুল (১২), সুজন (১৩) ও সানি (১৮)। এর মধ্যে সৌরভের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী। বাকিরা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পাশাপাশি কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালে আরও ১০ জন আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের তিন জন গুলিবিদ্ধ ও সাত জন ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাওয়ায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা যায়নি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক শেখ ফজলে রাব্বি ও কুমিল্লা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু নাসের মোহাম্মদ জোবায়ের বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘আমাদের এখানে সাত জন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এসেছেন। তারা ছররা গুলিতে আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সৌরভ নামের এক শিক্ষার্থীর চোখে গুলি লাগায় তাকে ঢাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি ছয় জনের দুজন হাসপাতাল থেকে চলে যান। চার জন এখনও চিকিৎসাধীন আছেন। তবে আমাদের হাসপাতালে কোনও শিক্ষার্থী মারা যাননি।’
ডা. আবু নাসের মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ‘আমাদের এখানে ১০ জন আহত ব্যক্তি এসেছেন। তাদের মধ্যে তিন জন গুলিবিদ্ধ। বাকি সাত জন ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে আহত হন। একজনের মাথায় ছররা গুলি লেগেছে। দুজনের শরীরে ছররা গুলি লাগে। চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা চলে যান। তাই হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় তাদের নাম লেখা হয়নি।’
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুমিল্লায় হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ আসেনি। আমরা যতটুকু জানলাম কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। কিন্তু নিহতের খবর পাইনি। সংঘর্ষের সময় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নেয়। পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিরাপত্তায় তাদের বাসায় পাঠানো হয়েছে।’
তবে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা জামায়াত-বিএনপিকে প্রতিহত করতে মাঠে ছিল। তারা কোনও শিক্ষার্থীকে আঘাত করেনি।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লার সমন্বয়কদের একজন আবদুর রাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করেছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধসহ আহত হন। একজন দৃষ্টি হারানোর আশঙ্কায় আছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের ৯ দফা দাবিতে কুমিল্লা জিলা স্কুলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ফৌজদারি হয়ে পুলিশ লাইনসের দিকে যাচ্ছিলেন। মিছিলটি রেসকোর্স এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া দেন। এ সময় অন্তত ৩০টি গুলি করা হয়। এতে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ ৩০ জন আহত হন।
Leave a Reply