কাঠের তৈরি ব্যতিক্রমী গাড়ি: কুমিল্লার লিটনের সৃষ্টিশীলতার দৃষ্টান্ত

- আপডেট সময় : ০৪:৩৪:০৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
- / ১৮৯৯ বার পড়া হয়েছে

কুমিল্লা শহরের রাস্তায় হঠাৎই চোখে পড়বে এক ব্যতিক্রমধর্মী যানবাহন—দূর থেকে দেখতে অনেকটা চার চাকার প্রাইভেটকার, কিন্তু এটি আসলে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। হেডলাইট, স্টিয়ারিং, গিয়ার, ব্রেক, হর্ন, মিউজিক স্পিকার, কাঠের ছাদ এবং আরামদায়ক বসার আসন—সবই আছে। কেবল নেই কাঁচ ও এসি। তবুও এই ‘কাঠের প্রাইভেটকার’ আজ এলাকাবাসীর মাঝে রীতিমতো চমক তৈরি করেছে।
এই অভিনব যানটির নির্মাতা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরাইশ এলাকার বাসিন্দা তাজুল ইসলাম লিটন (৩৮)। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই কেবল অভিজ্ঞতা ও মেধার ভিত্তিতে কাঠ দিয়ে গাড়িটি তৈরি করেছেন তিনি। পেশায় লিটন একজন কাঠমিস্ত্রি, লিটন দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কাঠের কাজ করেছেন। পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহে অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন। তবে পুরনো অটোরিকশাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর নতুন একটি কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি।
‘নিজেই বানাব’—এই সিদ্ধান্ত থেকে শুরু হয় নতুন অধ্যায়। লিটন ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করেন কীভাবে কাঠ দিয়ে একটি গাড়ি তৈরি করা যায়। প্রয়োজনীয় কাঠ ও যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে টানা তিন মাস কাজ করে তিনি তৈরি করেন একটি কাঠের প্রাইভেটকার সদৃশ গাড়ি। মূল কাঠ হিসেবে ব্যবহার করেন কড়ই গাছের শুকনো কাঠ। গিয়ার, চাকা, লাইট ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ পুরনো গাড়ি থেকে সংগ্রহ করেন।
চারটি ব্যাটারির সাহায্যে বিদ্যুৎচালিত এই গাড়িটি একবার চার্জে পুরো দিন চলতে পারে। সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী এই যান তৈরিতে লিটনের খরচ হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
লিটনের ভাষায়, “এই গাড়িটি অনেকটা প্রাইভেটকারের মতো হলেও পুরো বডি কাঠের তৈরি। সামনে-পেছনে চারটি চাকা থাকায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা কম। অন্য কোনো গাড়ি ধাক্কা দিলেও এটি উল্টাবে না বলে মনে করেন।”
গাড়িটি রাস্তায় বের হলেই পথচারীরা থমকে দাঁড়ান, ছবি তোলেন, জানতে চান এর পেছনের গল্প। লিটন বর্তমানে এই গাড়ি দিয়েই যাত্রী পরিবহন করছেন এবং আয়কৃত অর্থ দিয়ে বাকি কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি জানান, গাড়িতে কাঁচ লাগানো, রঙ করার কাজ ও ঘাস বসানোর পরিকল্পনা আছে—যাতে বৃষ্টিতে কাঠের ক্ষতি না হয়। এসব কাজের জন্য প্রয়োজন আরও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
তাজুল ইসলাম লিটনের এই উদ্ভাবন প্রমাণ করে, সৃজনশীলতা ও সংকল্প থাকলে সীমিত সম্পদ দিয়েও সম্ভব বড় কিছু করে দেখানো।