ঠিকাদারের সাথে এলজিডি কর্মকর্তারা জড়িত
মৌলভীবাজার পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজে দুর্নীতি

- আপডেট সময় : ১২:০৩:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
- / ২১৪৪ বার পড়া হয়েছে

যেখানে শিক্ষার আলো জ্বলার কথা, সেখানে যদি দুর্নীতির হয়, তবে তা শুধু দুর্ভাগ্য নয়, জাতিগত ব্যর্থতা।
মৌলভীবাজার কামালপুর ইউনিয়নের পৈলবাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৮ লাখ টাকা কাজে অনিয়মে অভিযোগ উঠেছে। কাজে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের সাথে এলজিডি কর্মকর্তারা জড়িত বলে এলাকার সচেতন মহলে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঠিকাদার সন্দীপ বাবুর সাব- ঠিকাদার রব্বান মিয়া ছিলেন। অর্ধেক কাজ করে সে কাজ ফেলে চলে যায়। কাজের প্রথম থেকে আওয়ামীলীগের দাপট দেখিয়ে সাব- ঠিকাদার রব্বান মিয়া ড্রইং মোতাবেক কাজ না করে তার ইচ্ছে মতো কাজ চালিয়ে যায়। তখন এলজিডির ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর( বর্তমানে বদলী) কাজ দেখা শোনা করতেন। তাকে ম্যানেজ করে কাজে ইচ্ছে মতো অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে ঠিকাদার। বেশী ভাগ কাজ ড্রইং মতো হয়নি। পরে শহীদ মিয়া নামের অন্য সাব- ঠিকাদার কাজ শুরু করেন।
স্কুলের দুর্নীতির বিষয়ে সাংবাদিকদের কে অবগত করার জন্য কামালপুর ইউনিয়নে কিছু বিএনপির কিছু পাতি নেতারা ঠিকাদারের পক্ষ হয়ে কেয়ারটেকারকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে। ।
এ ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ এলাকার সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিকট লিখিত অভিযোগ করলেও নেওয়া হয়নি কোন কার্যকারী পদক্ষেপ।
জানা যায়, পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজের জন্য ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮ সালে টেন্ডার করে এলজিডি। টেন্ডারে সন্দীপ নামের একজন ঠিকাদার কাজ পেয়ে ২২ সালে রব্বান মিয়া নামের একজন সাব- ঠিকাদার শুরু করেন। কাজের শুরু থেকে অনিয়ম হচ্ছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেন।
ইচ্ছে মতো কাজ চালিয়ে যায়। তখন এলজিডির ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর( বর্তমানে বদলী) কাজ দেখা শোনা করতেন। তাকে ম্যানেজ করে কাজে ইচ্ছে মতো অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে ঠিকাদার। বেশী ভাগ কাজ ড্রইং মতো হয়নি। পরে শহীদ মিয়া নামের অন্য সাব- ঠিকাদার কাজ শুরু করেন।
প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে কাজ চালিয়ে যায় ঠিকাদার রব্বান মিয়া। স্কুল কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসীর তোলা ছবিতে দেখা যায় ড্রইং মোতাবেক বিল্ডিংএ গ্রেড ভিম না দিয়ে মাটি ভরাট করে কাঁদা মাটির উপর লিন্ডার দেওয়া হয়েছে। ছাদে রডে হুক না দিয়ে এবং রেম রড় ছাড়া ঢালাই করা হয়েছে। পড়ে এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষের প্রতিবাদে আবার ভেংঙ্গে করা হয়। লুভারের নীচে বক্স না দিয়ে ২০”/২০” গাথনী করা হয়েছে। গ্রেড ভিমে ড্রইং মোতাবেক গ্রীল করে রড ঢোকানো ড্রইংএ থাকলেও ৮”/৬” কেটে লিন্ডার ঢালাই দেওয়া হয়। সিভিং ছাড়া করা হচ্ছে আস্তর। দেওয়াল আস্তরে প্রমশনে গড় মিলেরও অভিযোগ স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ সচেতন এলাকাবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন এই পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে অনেক ত্রুটি রয়েছে। সরকারের যে সার্কুলার রয়েছে কাজ করার কথা কিন্তু সে রকম হয়নি। প্রতিবাদ করেছিলাম স্কুলের ম্যাডামসহ। ১৮ সালের কাজ করার কথা ছিল। আমরা শুনতেছি কাজ হচ্ছে. আবার কাজ বন্ধ হচ্ছে, এই ভাবেই চলতেছে স্কুলের নির্মাণ কাজ।
গত বছর কাজ ধরেছে সিমেন্ট এবং রড আমরা তো সাধারণ মানুষ বলতে পারব না। যারা কাজ করেছে তারাই ভালো করে জানবে। মাঝে মধ্যে আমরা এসে স্কুলের কাজ দেখি। আমরা সাধারণ মানুষ এই কাজগুলো দেখার কথা ছিল না, দায়িত্ব যাদের ছিল তারা দেখার কথা ছিল।
পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের এ ব্যাপারে স্কুলের কাজের কেয়ারটেকার কামাল খাঁন বলেন, পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রড ছাড়াই ঢালাই দেওয়া হয়েছে,অতি তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। আমি বলেছিলাম যে রড ছাড়া কাজ করা হয়েছে। স্কুলের এই ভুবনে নির্মাণ কাজে চল্লিশ লাখ টাকার উপরে খরচ হয়নি। স্কুলের ভুবনে নির্মাণ কাজে নিচ থেকে উপরে সবকিছুই অনিয়ম কাজ হয়েছে।
পৈলভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলী সেন বলেন, ড্রয়িং বই রয়েছে, ড্রইং বইয়ের মধ্যে ১৮ সালের আমি দেখেছি কাজ। ২৪ শে জুলাই কাজ শুরু করেছেন। তারপর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে স্কুলের কাজগুলো পরিদর্শন করেন। আমাদের স্কুলের ক্লাসের রুম ছয়টি প্রয়োজন ছিল তারপরে তিনটা রুম কম করা হয়েছে। আমাদের অফিস রুম কোথায়,আর ক্লাস রুম কোথায়। কাজের গুণমান খুবই খারাপ করা হয়েছে। কাজের গুণমান সঠিকভাবে হচ্ছে না স্কুলের কাজে অনিয়ম হচ্ছে জেনে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেছি।
ঠিকাদার শহীদ মিয়া বলেন আমার কিছু করার নেই আমি কি বলবো। অনিয়ম এই স্কুলের কাজের অনিয়ম হলে আমরা আবার কাজ করে দেব। ঠিকাদার সন্দ্বীপ এর লাইসেন্স দিয়ে আমি কাজ পেয়েছি। সরকার টেন্ডার দিয়েছে। সরকারের কথা অনুযায়ী আমরা কাজ করব, পাবলিকের কথা শুনলে তো আমাদের কাজ হবে না। কেয়ারটেকার কামালের কথায় প্রধান শিক্ষক যেভাবে ইচ্ছা নাচানাচি করছে।
বক্স না করার ও গ্রেড ভিমে ডিল ঢোকানোর বিষয় স্বীকার করে এর যুক্তি তুলে ধরেন। আর এ বিষয় এলজিডির ইঞ্জিনিয়ারের সম্মতি ছিল বলে জানান। বাকী কাজ সঠিক ভাবে হয়েছে বলে দাবী করেন।
মৌলভীবাজার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মিল বলেন, অনুমোদিত টেন্ডার হয়েছে তিন তলা ফাউন্ডেশন তিন রুমটা। রুম তিনটি বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা নিয়ম মত প্রতিদিন কাজ দেখছি এবং কাজ চলমান রয়েছে। এলজিডি শুক্রবার দিনটাকে ভেরিফাই করা হয় না। অনেক জায়গায় কাজ গিয়ে দেখতে হয় এটা সন্ধ্যা বা রাত বিষয় না। স্কুলের কাজ ড্রইং মোতাবেক হচ্ছে। এছাড়া কাজ এখনো শেষ হয়নি। অনিয়মের প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, স্কুলের কাজ সঠিক ভাবে হচ্ছে। কোন অনিয়ম হচ্ছে বলে কোন অভিযোগ পাইনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে বলেন, আমি অভিযোগ এখনো পাইনি। আর প্রধান শিক্ষক কাজের ড্রইং কি বুঝেন? উনাকে আমার নিকট নিয়ে আসেন। আমাকে ড্রইংটা বুঝিয়ে দিতে। ড্রইং বুঝিয়ে দেওয়ার দায়ীত্ব স্কুলের প্রধান শিক্ষকের?
মৌলভীবাজার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: তাজ উদ্দিন বলেন, পৈলভাগ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের অনিয়মের সম্পর্কে প্রধান শিক্ষিকা কাছ থেকে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে আমি নিজে পরিদর্শন করেছি। আমার সাথে ছিল উপজেলা প্রকৌশলী পরিদর্শন করেছেন। আর অভিযোগটি তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার এলজিডির নির্বাহী প্রকৌশলীর নিকট পাঠিয়েছি। আমি ঠিকাদারকে সতর্ক করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি দ্রুত সময়ে সুন্দর একটি সমাধান হবে।