September 20, 2024, 11:47 pm

মৌলভীবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, পানিবন্দি তিন লক্ষাধিক মানুষ

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধিঃ
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, আগস্ট ২২, ২০২৪
নিরাপদ স্থানে সরে যাচ্ছেন বন্যাকবলিতরা।
ভারতের ত্রিপুরা থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজার জেলায় বন্যার পানি বাড়তে থাকায় পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের মধ্যে চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। জেলার সাত উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার বাসা-বাড়ি, আঞ্চলিক মহাসড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
মনু নদের পানি শহরের সেন্ট্রাল রোডের বিভিন্ন দোকানের নিচ দিয়ে শহরে প্রবেশ করেছে। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে শহর তলিয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে মাইকিং করে বলা হয়েছে বাসাবাড়ি ও দোকানের মালামাল নিরাপদে রাখার জন্য।

মৌলভীবাজার কদমহাটা মাজারের সামনে থেকে তুলা চিত্র

মৌলভীবাজার শহরের সেন্ট্রাল রোডের ব্যবসায়ী সুমন আহমদ বলেন, ‘আমাদের অনেকের দোকানের নিচ দিয়ে শহরে পানি ঢুকছে।

আমরা আতঙ্কে সব মালামাল সরিয়ে নিয়েছি। যেকোনো সময় বাঁধ ভেঙে পুরো শহর তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টায় জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে সাত উপজেলায় বন্যাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার জন এবং ৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে ছয় হাজার ৬৫ জন। পৌরসভা ও ইউনিয়ন মিলে ৪৭টি এলাকায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ২১২টি গ্রাম।প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৮৫ মেট্টিক টন চাল ও সাত উপজেলায় ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম রয়েছে ২৫টি।

আজ সন্ধ্যায় ৬টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, জেলার জুড়ী নদে বিপৎসীমার প্রায় ১৯৫ সেন্টিমিটার, ধলাই নদে বিপৎসীমার ২২ সেমি ও মনু নদীর চাঁদনীঘাটে ১১৯ সেন্টিমিটার ও রেলওয়ে ব্রিজে ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার শেরপুর পয়েন্টে কুশিয়ারা নদী পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

মৌলভীবাজার কদমহাটা মাজারের সামনে থেকে তুলা চিত্র

মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ সিরাজী জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পুকুর খামারের সংখ্যা ১১৬৮টি, আয়তন ২৬৮ হেক্টর।

ক্ষতিগ্রস্ত মাছের পরিমাণ ৩২৪ মেট্রিকটন, পোনামাছের পরিমাণ ৯১ লাখ। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের মূল্য পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত পোনা মাছের মূল্য প্রায় ৭৫ লাখ টাকা। মৎস্য সম্পদের মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছয় কোটি ১১ লাখ টাকা।

মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামসুদ্দিন আহমেদ জানান, জেলায় ৩৯ হাজার ৮২ হেক্টর জমিতে আমান ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ এক হাজার হেক্টর।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, অব্যাহত বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সবকয়টি নদ-নদীর পানি ভয়ঙ্করভাবে বেড়েছে। নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিভিন্ন নদীর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামতের কাজ চলছে। এ ছাড়া জেলা শহরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান মেরামতের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, মাইকিং করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, সাতটি উপজেলায় নগদ অর্থ ও ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category