রুহুল আমিন রুকু,কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশ ও ভুটান সরকারের যৌথ উদ্যোগে কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। জিটুজি-ভিত্তিক প্রস্তাবিত ‘ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ স্থাপনের সম্ভাবনা যাচাই করতে ভুটানের একটি প্রতিনিধি দল ১০ মার্চ দুই দিনের সফরে কুড়িগ্রাম আসছে বলে জানা গেছে।
শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মুশফিকুল আলম হালিম।
ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে এই জমির অবস্থান। প্রয়োজনে এখানে আরও জমি অধিগ্রহণের সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা ভূমি অফিস।
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করে, এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে কুড়িগ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত গতিতে বাড়বে। এর ফলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে, যা এখানকার মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে।
জানা গেছে, সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের মাধবরাম মৌজার অন্তর্ভুক্ত ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষকে (বেজা) হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন।
ধরলা সেতুর পূর্ব প্রান্তে ওই জমির অবস্থান। প্রয়োজনে ওই স্থানে জমি অধিগ্রহণেরও সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে। আর এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ-ভুটান ব্যবসায়িক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। সোনাহাট স্থল বন্দরের কার্যক্রমেও আসবে গতি। এতে জেলার মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধন হবে।
২০২৩ সালের মে মাসে লন্ডনে ভুটানের রাজা ও রানির সঙ্গে এক দ্বিপক্ষীয় সভায় কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভুটান সরকারের একটি প্রতিনিধি দলটি রোববার কুড়িগ্রাম সফরে আসছে।
চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত এইচই মি. রিনচেন কুয়েন্টসিল। দলটির সঙ্গে বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুনও থাকবেন বলে সফরসূচি থেকে জানা গেছে। তারা প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থানসহ সোনাহাট স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌবন্দর পরিদর্শন করবেন।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি বেজা কর্তৃপক্ষকে বন্দোবস্ত করে দিয়েছি। প্রয়োজনে আরও ৮০ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে।’
ইউএনও মুশফিকুল আলম হালিম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার বৃহৎ এলাকা চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য জেলায় কলকারখানা প্রয়োজন। এখান থেকে যেহেতু ভুটান অনেক কাছে, তাই ভুটানের সঙ্গে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে পারলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্রুত গতিতে বাড়বে। এর ফলে মানুষের সক্ষমতা বাড়বে, যা এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রভাব ফেলবে। সরকার সে লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে।’
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘কুড়িগ্রামের সঙ্গে ভারত ও ভুটানের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। জেলার দুটি স্থলবন্দর ও চিলমারী নৌ-বন্দরের সঙ্গে ভুটানে যোগাযোগ সুবিধা রয়েছে। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, কাঁচামাল তৈরির সম্ভাবনা এবং মানবসম্পদের সহজলভ্যতা- সব মিলিয়ে কুড়িগ্রামে যৌথ অর্থনৈতিক অঞ্চল হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হবে।’
Leave a Reply